রাঙামাটিতে গর্ভবতী গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ! মৃত বাচ্চা ছিড়ে খাচ্ছে কাক-কুকুরে


আলমগীর মানিক    |    ০৬:১৫ পিএম, ২০২৪-০২-১৩

রাঙামাটিতে গর্ভবতী গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ! মৃত বাচ্চা ছিড়ে খাচ্ছে কাক-কুকুরে

আলমগীর মানিক

কোনো প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রকাশ্য দিবালোকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়াই পর্যটন শহর রাঙামাটিতে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে গবাধি পশুর মাংস। স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যটন শহর হওয়া সত্বেও সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই এখানকার মাংস বিক্রেতারা প্রকাশ্যে রাস্তার ধারে গর্ভবতী গরুসহ রোগাক্রান্ত গরু জবাই করে শহরের মাংসের দোকানগুলোতে বিক্রি করছে।

মঙ্গলবার সকালেও শহরের ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ধারে গর্ভবতী গরুসহ অন্তত ৫টি গরু জবাই করেছে। তারমধ্যে একটি গরুর পেটের মৃত বাচ্চাকে রাস্তার ধারেই ফেলে দেয় কসাইরা। পরবর্তীতে কুকুর ও কাকেরা মিলে এই মৃত বাচ্চাটিকে ছিঁড়ে খেতে দেখা গেছে। 

বিশ্বস্থ সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার শহরের তবলছড়ির বটতলার রবি ও বনরূপার মাছবাজারের ভেতরের শাহআমান মাংসের দোকানে গাভী গরুর মাংস বিক্রি করা হয়েছে। এদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তারা ফোন রিসিভ করেনি। 

প্রতিনিয়ত হাজারো পর্যটকের আগমনের একটি পর্যটন শহরে প্রকাশ্য-দিবালোকে এইধরনের অপকর্ম করার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি শহরের ৬টি দোকানে বিক্রির লক্ষ্যে ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় ৫টি গরু জবাই করা হয়। নিয়ম অনুসারে জবাইয়ের সময় একজন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, একজন বাজার কর্মকর্তা ও একজন পশু চিকিৎসক এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে জবাইয়ের আগে গরুগুলোকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার কথা থাকলেও মঙ্গলবার সংশ্লিষ্টদের একজনও উপস্থিত ছিলেন না। 

খোদ কসাই ও পশু চিকিৎসক নিজেরাই এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জবাই করার আগে গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ দেওয়ার জন্য দায়িতপ্রাপ্ত চিকিৎসক কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে কসাই জাফর জানান, কেউই ঘটনাস্থলে আসেনি আমরা কি করবো। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পৌরসভাকে একটি গরুর জন্য ১০০ টাকা দিতে হয়। জবাইয়ের আগে কোনো পশু চিকিৎসক পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসেন না। তাই স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই ও মাংস বিক্রি করে আসছে সবাই। 

এদিকে পৌরসভার বাজার কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, গরু জবাইয়ের আগে সে পশুটিকে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা নীরিক্ষা করে জবাইয়ের পর মাংসের মধ্যে সীল মেরে সেই মাংসকে হালাল ঘোষণা করার দায়িত্ব একজন পশু চিকিৎসকের। সেটি আমাদের পৌরসভার দায়িত্ব নয়। 

এদিকে, রাঙামাটির উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবু তাহের জানিয়েছেন, অসুস্থ থাকার কারনে মঙ্গলবার সকালে তিনি ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। এছাড়া রোগাক্রান্ত বা গর্ভবতী গরু জবাই করলে এবং সেটি প্রমাণিত হলে ৬মাসের দন্ড হতে পারে বলেও জানিয়েছেন এই প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা। 

বিষয়টি রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম এর নজরে আনা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট্যদের নির্দেশনা প্রদান করবো। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যটন শহর হওয়ায় রাঙামাটি শহরে প্রতিদিনই গরুর মাংসের চাহিদা বেশ। রোববার ব্যতিত পুরো সপ্তাহেই গরু-ছাগল,মহিষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করে বিক্রি করা হচ্ছে রাঙামাটি শহরে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। শহরে গরুর মাংসের দামেরও রয়েছে ব্যাপক তারতম্য।

জেলা প্রাণী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার মাধ্যমে পশু জবাই করার নিয়ম থাকলেও রাঙামাটি শহরের কতিপয় ব্যবসায়ীরা তা অনুসরণ করেন না। নেই প্রশাসনিক নজরদারি। তারা নিজেদের খুশি মতো যেন-তেন পশু জবাই করে দেদারসে বিক্রি করছেন প্রকাশ্যে। একটি পর্যটন শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে এই ধরনের অপকর্ম করে বেড়ালেও সংশ্লিষ্ট্য বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা, স্যানিটারি ইন্সপেক্টরসহ প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের নিশ্চুপতায় প্রতিনিয়তই নিরাপদ ও বিশুদ্ধ মাংস প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তা সাধারণ। দেখার যেন কেউ নেই।